রাঙ্গামাটি রিপোর্ট –
রাঙ্গামাটিতে গত ১৩ জুন ঘটে যাওয়া পাহাড় ধসের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য এখন থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। তিনি বলেন, পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের মাঝে পূর্ব থেকে প্রস্তুতি কিংবা সচেতনতা থাকলে এতো বেশী প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতো না। স্মরণকালের এ ভয়াবহ দুর্যোগ সম্পর্কে মানুষের মাঝে কোন ধারণা না থাকায় এবার যানমালের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনার আর যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজে জনমত গঠন করতে হবে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক মত বিনিময় কর্মশালায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান এ আহবান জানান।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক কর্মসূচী ইউএনএফপিও ও একশন এইড বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রীনহিল এই মত বিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় আগামীতে পাহাড় ধস বা দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সভায় বেশকিছু সুপারিশমালা গ্রহণ করা হয়।
পাহাড় ধসের ঘটনার পর গ্রীনহিল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের জীবনমান উন্নয়নে কমিউনিটি ওয়াচ গ্রুপ নামে এলাকা ভিত্তিক দল গঠন করে। এ কমিউনিটি ওয়াচ গ্রুপের প্রধানগণ মত বিনিময় সভায় অংশ গ্রহণ করেন। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিবর্গ মত বিনিময় অংশ নেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রীনহিলের নির্বাহী পরিচালক মং থোয়াই চিং এর সভাপতিত্বে মত বিনিময় কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন ইউএনএফপিএ এর প্রতিনিধি রুমানা পারভিন, একশন এইড বাংলাদেশের প্রতিনিধি শেখ মঞ্জুরুর-ই আলম, একশন এইড বাংলাদেশের ম্যানেজার কাসফিয়া ফিরোজ, রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক গোলাম মোস্তফা, গ্রীনহিলের প্রজেক্ট ফোকাল লিভিং ষ্টোন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গ্রীন হিলের চেয়ারপার্সন টুকু তালুকদার।
জেলা প্রশাসক বলেন, পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের আর্থিক অবস্থা খুবই দূর্বল। তারা ক্ষুদ্র ঋণের যাতাকলে পরে অনেকে নিঃশেষ। এনজিগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তারা আর এ ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। অনেকেই এক এনজিও থেকে অপর এনজিও’র ঋণ পরিশোধ করছে। এতে আর্থ-সামাজিক উন্নতির পরিবর্তে আরো অবনতি হচ্ছে। তিনি এনজিওগুলোকে ঋণদান কর্মসূচীর পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে আরো বেশী ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন।
একশন এইড বাংলাদেশের প্রতিনিধি শেখ মঞ্জুরুর-ই আলম বলেন, রাঙ্গামাটিতে ১৩ জুনের ঘটে যাওয়া পাহাড় ধসের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইতিহাসে আর ঘটেনি। তিনি বলেন, এ দুর্যোগকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তিনি আগামীতে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সমাজের নারীদের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করতে হবে তাহলেই ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ইউএনএফপিএ এর প্রতিনিধি রুমানা পারভিন বলেন, ইউএনএফপিএ রাঙ্গামাটির পাহাড় ধসের ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা দিয়েছে। তিনি বলেন, একশন এইড বাংলাদেশের মাধ্যমে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রীনহিল একাজে সম্পৃক্ত হয়ে সফলভাবে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গঠন করা হয়েছে কমিউনিটি ওয়াচ গ্রুপ যা আগামীতে যে কোন ক্রান্তিকালীন সময়ে সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।